মুসল্লীদের জন্য খুলে দেয়া হলো মসজিদে নববীর ছাতা
মহামারি করোনার কারণে দীর্ঘদিন বন্ধ রাখার পর আবারো মুসল্লীদের ইবাদতের স্বার্থে মসজিদে নববীর ছাদে থাকা বিশাল আকৃতির ছাতাগুলো খুলে দেওয়া হচ্ছে।
সারা বছরই এই মসজিদে নববীর চত্ত্বরে ইবাদতের জন্য জমায়েত হন লক্ষ লক্ষ ধর্মপ্রাণ মুসল্লী। মসজিদের ভেতরে ও বাহিরের চত্ত্বরে প্রতিদিনই নামাজে উপস্থিত হন অসংখ্য মুসল্লী। গরমে রৌদ্রের প্রখরতা থেকে এবং বৃষ্টির সময়ে বৃষ্টির পানি থেকে মুসল্লীদের রক্ষার জন্য তৈরী করা হয় এ ছাতাগুলো।
করোনা ভাইরাসের বিস্তার রোধে প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থার মধ্যেই এখন মুসল্লীরা ফজর, মাগরিব, ইশা ও জুমার নামাজে অংশ নিতে পারবেন।
আরব নিউজের তথ্য অনুযায়ী, মসজিদে নববীর ছাদে প্রায় ১০ হাজার মুসল্লী নামাজ পড়তে পারেন। মুসল্লীদের নিরাপদ প্রবেশের জন্য বেশ কয়েকটি প্রবেশ পথে উচ্চ প্রযুক্তির থার্মাল ক্যামেরা ও নিরাপত্তা প্রহরী রাখা হয়েছে। যারা মসজিদে নববীর ছাদে নামাজ আদায় করতে চান তারা ৫, ৮, ২১, ৩৪ এবং ৩৭ নং প্রবেশ পথ দিয়ে প্রবেশ করতে পারবেন।
ইতিহাসের তথ্য অনুযায়ী, সর্বশ্রেষ্ঠ ও শেষ নবী হজরত মুহাম্মদ (স.) কর্তৃক প্রতিষ্ঠিত এই মসজিদটি সৌদি আরবের মদিনায় অবস্থিত। পৃথিবীর সকল মসজিদের মধ্যে গুরুত্বের দিক থেকে মক্কার মসজিদুল হারামের পর মসজিদে নববীর স্থান। নবী হজরত মুহাম্মদ (স.) হিজরত করে মদিনায় আসার পর এই মসজিদ নির্মিত হয়।
হজরত মুহাম্মদ (স.) বাসগৃহের পাশে এই মসজিদ নির্মিত হয়েছিল। তিনি নিজে ব্যক্তিগতভাবে মসজিদের নির্মাণকাজে অংশ নিয়েছিলেন। সেসময় মসজিদ সম্মিলনস্থল, আদালত ও মাদ্রাসা হিসেবে ভূমিকা পালন করেছে। পরবর্তীকালের মুসলিম শাসকরা মসজিদ সম্প্রসারণ ও সৌন্দর্যবর্ধন করেছেন। ১৯০৯ খ্রিষ্টাব্দে আরব উপদ্বীপের মধ্যে এখানেই সর্বপ্রথম বৈদ্যুতিক বাতি জ্বালানো হয়।
১৯৩২ খ্রিষ্টাব্দে সৌদি আরব প্রতিষ্ঠার পর মসজিদে কয়েক দফা সংস্কার করা হয়। ১৯৫১ খ্রিষ্টাব্দে ইবনে সৌদ মসজিদের পূর্ব ও পশ্চিম দিকে নামাজের স্থান বাড়ানোর জন্য স্থাপনাগুলো ভেঙে ফেলার আদেশ দেন। এসময় কৌণিক আর্চযুক্ত কংক্রিটের স্তম্ভ স্থাপন করা হয়। পুরনো স্তম্ভগুলো কংক্রিট ও শীর্ষে তামা দ্বারা মজবুত করা হয়। সুলাইমানিয়া ও মাজিদিয়া মিনার দুটি মামলুক স্থাপত্যের আদলে প্রতিস্থাপন করা হয়। উত্তরপূর্ব ও উত্তরপশ্চিমে দুটি অতিরিক্ত মিনার যুক্ত করা হয়। ঐতিহাসিক মূল্যের কুরআন ও অন্যান্য ধর্মীয় গ্রন্থ রাখার জন্য পশ্চিম দিকে একটি গ্রন্থাগার স্থাপন করা হয়।
১৯৭৪ খ্রিষ্টাব্দে ফয়সাল বিন আবদুল আজিজ মসজিদের অংশ হিসেবে ৪০,৪৪০ বর্গমিটার যুক্ত করেন। ১৯৮৫ খ্রিষ্টাব্দে ফাহাদ বিন আবদুল আজিজের শাসনামলে মসজিদ আরো সম্প্রসারিত হয়। ১৯৯২ খ্রিষ্টাব্দে এর নির্মাণ সমাপ্ত হওয়ার পর মসজিদের আয়তন দাঁড়ায় ১.৭ মিলিয়ন বর্গফুট।
এই মসজিদের মধ্যে ছোট কিন্তু বিশেষ স্থান রয়েছে যা রিয়াদুল জান্নাহ (জান্নাতের বাগান) বলে পরিচিত। এটি হজরত মুহাম্মদ (সঃ) এর সমাধি থেকে তার মিম্বর পর্যন্ত বিস্তৃত। এখানে প্রবেশ সবসময় সম্ভব হয় না বিশেষত হজের সময় মানুষ অনেক বেশি হওয়ার কারণে। রিয়াদুল জান্নাহকে জান্নাতের অংশ হিসেবে দেখা হয়।
এই মসজিদ দুই স্তর বিশিষ্ট এবং আয়তাকার। উসমানিয় নামাজের স্থানটি দক্ষিণমুখী। এতে সমতল ছাদ এবং বর্গাকার ভিত্তির উপর ২৭টি চলাচলসক্ষম গম্বুজ রয়েছে। গম্বুজের নিচের খোলা স্থানে ভেতরের স্থান আলোকিত করে। গম্বুজ সরিয়ে ছায়ার ব্যবস্থা করা হয়। এছাড়া মসজিদের প্রাঙ্গণে থাকা স্তম্ভের সাথে যুক্ত ছাতাগুলো খুলে দিয়ে ছায়ার ব্যবস্থা করা হয়। মসজিদের চারপাশের বাধানো স্থানেও নামাজ পড়া হয় যাতে ছাতাসদৃশ তাবু রয়েছে। জার্মান স্থপতি মাহমুদ বোদো রাশ্চ ও তার প্রতিষ্ঠান এই গম্বুজ ও ছাতাগুলো নির্মাণ করে।
পাঠকের মতামত